বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অনেক অবিশ্বাস্য বিষয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এখন অনেক দুরারোগ্য ব্যাধিকে বশে আনা সম্ভব হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে ততই শক্তিশালী হয়ে উঠছে চিকিৎসা পদ্ধতি।
একসময়ের প্রাণঘাতী কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি বিজ্ঞানের কল্যাণে যাদুঘরে স্থান নিয়েছে। ক্যান্সারের মত মারাত্মক ব্যাধিও আজ আলোক রশ্মির সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। শরীরের অভ্যন্তরে অপারেশনের জন্য এখন কাটা ছেঁড়ার বদলে ছোট একটি ছিদ্র করেই কাজ সমাধা করা যাচ্ছে। চোখের মত জটিল অঙ্গের অপারেশন সম্পন্ন হচ্ছে LASER নামক আলোক প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার রক্তপাত এবং এনেসথেসিয়া ছাড়াই।
চিকিৎসা গবেষণার মাধ্যমে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, নতুন চিকিৎসা যন্ত্র আবিষ্কার হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে Head Transplant নামক দুঃসাহসিক এক শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে একজনের মাথা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে আরেকজনের শরীরে।
সম্প্রতি ইটালিয়ান সার্জন Dr. Sergio Canavero এই নতুন ধরনের সার্জারি করা যে সম্ভব, তার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই অস্ত্রোপচার শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতই মনে করা যেতে পারে যেমন কিডনি প্রতিস্থাপন, হৃদপিন্ড প্রতিস্থাপন ইত্যাদি; তবে পার্থক্য এই যে এখানে ডোনার তার নির্দিষ্ট অংগ দান না করে তার সম্পূর্ণ দেহটাই দান করছেন।
অর্থাৎ এখানে দাতা হবেন একজন ব্রেইনডেড মানুষ, যিনি মারা গেছেন তার মস্তিস্ক কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়ার দরুন কিন্তু তার শরীরের অন্যান্য অংশ কার্যকর; আর গ্রহীতা হবেন এমন একজন মানুষ যার মস্তিস্কের কার্যকারিতা ঠিক আছে কিন্তু তিনি কোন জটিল শারীরিক রোগাক্রান্ত, যার জন্য তার জীবন সংকটাপন্ন।
অর্থাৎ এখানে দাতা হবেন একজন ব্রেইনডেড মানুষ, যিনি মারা গেছেন তার মস্তিস্ক কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়ার দরুন কিন্তু তার শরীরের অন্যান্য অংশ কার্যকর; আর গ্রহীতা হবেন এমন একজন মানুষ যার মস্তিস্কের কার্যকারিতা ঠিক আছে কিন্তু তিনি কোন জটিল শারীরিক রোগাক্রান্ত, যার জন্য তার জীবন সংকটাপন্ন।
এই সার্জারির প্রথম রোগী হতে যাচ্ছেন ৩০ বছর বয়সী এক রাশিয়ান নাগরিক Valery Spiridinov. উনি জটিল জেনেটিক রোগ Werdnig-Hoffman disease এ আক্রান্ত। এ রোগে তার মাংসপেশিগুলো ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাচ্ছে যা তাকে প্রলম্বিত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
Dr. Sergio Canavero আগামী দুই বছরের মধ্যে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করছেন, তবে তা অবশ্যই একজন ব্রেইনডেড ডোনার পাওয়া সাপেক্ষে। এই অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এখন চিকিৎসকদের হাতে রয়েছে।
অস্ত্রোপচারে মুল প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে। তারপর স্পাইনাল কর্ড সহ সামগ্রিক সংযোজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২৪-৩৬ ঘণ্টার মত সময় লাগবে। এই সার্জারি সম্পন্ন করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রায় ১৫০ জন ডাক্তার ও নার্সের এক বিশাল টিম। এই অস্ত্রোপচারে ব্যায় হবে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২০ কোটি টাকা।
এই সুবৃহৎ অস্ত্রোপচারে অনেক জটিলতা রয়েছে। যার দেহে মাথা প্রতিস্থাপন করা হবে তার দেহের সাথে যার মাথা সংযুক্ত করা হচ্ছে তার দেহের বিভিন্ন অংশের মিল থাকতে হবে। বিশেষ করে রক্তের গ্রুপ। এছাড়াও প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হবার পরেও কোন কারনে যদি দেহ তার নতুন মস্তককে রিজেক্ট করে তবে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। এছাড়া অনেকে এমনভাবে বলেছেন “মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা থাকতে পারে”।
১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম Head transplant এর একটি পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়েছিল একটি বানরের উপর। তবে সেসময় স্পাইনাল কর্ড প্রতিস্থাপনের মত প্রযুক্তি না থাকায় বানরের স্পাইনাল কর্ড সঠিকভাবে সংযুক্ত করা যায়নি। ফলাফল হিসাবে বানরটি শরীর নড়াচড়া করতে পারেনি এবং অস্ত্রোপচারের ৮ দিন পর মারা যায়। তবে এখন স্পাইনাল কর্ড প্রতিস্থাপনের মত প্রযুক্তি রয়েছে চিকিৎসকদের হাতে, যার দরুন এমন একটি অস্ত্রোপচারে উদ্যোগী হয়েছেন Dr. Sergio Canavero.
Dr. Sergio Canavero এই অস্ত্রোপচারকে মানুষের অমরত্বের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই অস্ত্রোপচার সফল হলে, একদিকে যেমন জীবনের জন্য আত্মার বিষয়টি আরো অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে যেমনটা একবার হয়েছে Heart Transplant সফল হবার পর তেমনি শুধু মাথাকে বাচিয়ে রাখা মানেই একজন মানুষের অস্তিত্বকে বাচিয়ে রাখতে পারা এই ধারনার প্রসার ঘটবে।
Head Transplant সফল হলে তা একজন মানুষকে বর্তমান সময় থেকে আরো দীর্ঘায়ু দিতে সক্ষম হবে বিশেষ প্রক্রিয়ায়।
বর্তমান সময়ে ক্লোনিং একটি সফল ও কার্যকরী পদ্ধতি। Head transplant সফল হলে কোন একজন ব্যক্তির দেহকোষ দিয়ে ক্লোনিং এর মাধ্যমে আরেকজন ‘তাকে’ তৈরী করা হবে তারপর নতুন ‘তার’ মাথার স্থানে বর্তমান মাথাটি প্রতিস্থাপন করা হবে। এতে মানুষটি তার ব্যক্তিত্ব, স্মৃতি, আমিত্ব সহই একটি নতুন দেহ পাবে যেটি তার আয়ুষ্কাল কমপক্ষে আরো ৪০ বছর বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে সহজেই।
তবে ক্লোনিং করে আয়ুষ্কাল বাড়ানোর এই পদ্ধতি কতটা ‘মানবিক’ হবে নতুন ‘তার’ জন্য এবং এই পদ্ধতিকে মেডিক্যাল এথিকসের অনুমোদন দেয়া উচিৎ হবে কিনা বা দেবে কিনা তা নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে।
Head Transplant সফল হলে তা একজন মানুষকে বর্তমান সময় থেকে আরো দীর্ঘায়ু দিতে সক্ষম হবে বিশেষ প্রক্রিয়ায়।
বর্তমান সময়ে ক্লোনিং একটি সফল ও কার্যকরী পদ্ধতি। Head transplant সফল হলে কোন একজন ব্যক্তির দেহকোষ দিয়ে ক্লোনিং এর মাধ্যমে আরেকজন ‘তাকে’ তৈরী করা হবে তারপর নতুন ‘তার’ মাথার স্থানে বর্তমান মাথাটি প্রতিস্থাপন করা হবে। এতে মানুষটি তার ব্যক্তিত্ব, স্মৃতি, আমিত্ব সহই একটি নতুন দেহ পাবে যেটি তার আয়ুষ্কাল কমপক্ষে আরো ৪০ বছর বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে সহজেই।
তবে ক্লোনিং করে আয়ুষ্কাল বাড়ানোর এই পদ্ধতি কতটা ‘মানবিক’ হবে নতুন ‘তার’ জন্য এবং এই পদ্ধতিকে মেডিক্যাল এথিকসের অনুমোদন দেয়া উচিৎ হবে কিনা বা দেবে কিনা তা নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে।
সেই সাথে এই অস্ত্রোপচার, চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতির সাথে সাথে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। এই অস্ত্রোপচার সফল হলে প্রথমবারের মত যে হাসপাতাল এটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে তারা থাকবে এগিয়ে এবং পৃথিবীর অন্যান্য হাসপাতালকে এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে তারাই নেতৃত্ব দেবে। অর্থনৈতিক দিকে দিয়েও যেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মানুষের প্রয়োজনেই বিজ্ঞান, প্রয়োজনেই আবিষ্কার। এই শল্যবিদ্যা যেমন একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষকে ব্রেইনডেড ডোনারের শরীরের সাথে যুক্ত করে তাকে দিতে পারে স্বাভাবিক জীবন তেমনি ক্লোনিং পদ্ধতির প্রয়োগে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি আবার প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে মানবতাকে, অন্তত বর্তমান মানবতার সংজ্ঞায়।
একটা ভিডিও আপলোড করে দিলাম আশা করি ভাল লাগবে ।
Comments
Post a Comment